আজকে স্বপ্নহারা পথিক ভাই আমাকে ইনবক্সে কিছু প্রশ্ন করেছেন। পাহাড়ীদের নিয়ে আজ অনেক পোস্ট এসেছে,মনে হয় না খুব বেশি কিছু বাকি আছে বলার জন্য। তবুও আমি আমার ধারণাটুকু জানাচ্ছি।
আপনার পাঠানো স্ক্রিনশট থেকে আজকের দিবস উপলক্ষে একজন চাকমার পোস্ট দেখলাম। সেখানে যা লেখা আছে তা আমার জন্য অস্বস্তিকর ও অপমানজনক।
“আজ কুকুরের বাচ্চা দিবস। আজকের দিনে কুকুরদের বাবা জন্মগ্রহণ করেছিল। কুকুরগুলোর আজ বিশেষ দিন তাই সরকারী বন্ধ। যাদের যাদের কুকুর আছে আজকে একটু বেশি করে ভাত দাও।”
এরপরেও কেন আমরা আদিবাসীদের পক্ষে দাড়াবো ? এটা হল প্রশ্ন। আমার বন্ধুতালিকায় এরকম একজন ছিল যাকে অনেক আগে আনফ্রেন্ড করেছি এধরনের কথা বলার জন্য। কিন্তু আমি প্রতিবাদ করতে পারিনি । কারণ, আমার প্রতিবাদ করার মত ভিত্তি আমার স্বজাতি রাখেনি। আমি চোরের মত খালি আনফ্রেন্ডই করেছি, আমার অসহ্য লাগায়।
আদিবাসীদের একজন আমাদের কুকুরভাবে, এখন আপনার কাছে প্রশ্ন হল স্বাধীনতার পরে থেকে আমরা বাঙালি পরিচয় দানকারীরা কতটুকু তাদের সাথে ভাল আচরণ করেছি যে, আমাদের কে এর চাইতে ভাল ভাববে? আমরা তাদের বসতভিটা কেড়ে নিয়েছি, তাদের জাতিগত পরিচয় কেড়ে নিয়ে তাদের বাঙালি হয়ে যেতে নির্দেশ দিয়েছি, তাদের নারীদের ধর্ষণ করে চলেছি গনিমতের মাল ভেবে। আমাদের টাকায় কেনা বুলেটে রক্ত ঝরে আদিবাসীদের। আমরা কি তাদের মানুষ ভাবি? এদেশের নাগরিক ভাবি?
পাকিস্তানিরা আমাদের সাথে যে আচরণ করেছিল,আমরা সেই একই আচরণ করে চলেছি। আমরা কি পাকিস্তানিদের ঘৃণা করিনা এখনও ? পাকিস্তানিদের আচরণের জন্য আমরা এখনো জাতি হিসাবে গালি দিই তাদেরকে। আমরা আমাদের জাতির পিতা হিসাবে মানি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
সন্তান হিসাবে যখন আমরা কোন খারাপ কাজ করি তখন আমাদের সাথে সাথে আমাদের পিতাও গালি খায়। পিতাকে গালি দিলে পুত্র হিসাবে রাগ হওয়ারই কথা, কিন্তু পিতার মর্যাদা রক্ষা করতে কি সামান্যতম সচেতন আমরা? আমরা অন্যদের উপর অত্যাচার করেই চলবো আর তারা আমাদের গালি দেবে না এমনটা কি করে ভাবি?
এরপরে বলেছেন, তারা আসলে নিজস্ব সংস্কৃতি চায় না,তারা চায় নিজস্ব শাসন ক্ষমতা।
এবার আসি কেন তারা নিজস্ব শাসন ক্ষমতা চাচ্ছে সেই প্রসঙ্গে।
পৃথিবীর অধিকাংশ স্বাধীনতা আন্দোলনের পটভূমিই কিন্তু এই সাংস্কৃতিক অবদমন থেকে শুরু।
আমাদের স্বাধীনতার দীর্ঘ সংগ্রামও শুরু হয়েছিল এই সাংস্কৃতিক অবদমন থেকে। আমাদের রবীন্দ্র চর্চা বন্ধ করার অপচেষ্টা করা হয়েছিল, আমাদের ঘাড়ে উর্দূ চাপিয়ে দিয়ে আমাদের মূল পরিচয় বাঙালি সেটাই লোপ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। একসময় আমরা আর পাকিস্তানিরা আসলে এক নই ‘আলাদা‘। কিন্তু যদি আমাদেরকে আমাদের মত চলতে দেওয়া হত তাহলে এই ‘আলাদা‘ মনোভাবটা সৃষ্টি হত না, আমরা সেটাকে বৈচিত্র হিসাবেই ভাবতাম। আর এই ‘আলাদা‘ ভাবার অনুভুতিটা শুরু হয় রাষ্ট্রযন্ত্রের হাত ধরেই। রাষ্ট্রযন্ত্রই বোনা শুরু করে নানা ‘আলাদা‘ ভাবার বীজসমূহ, আর তা একসময় মহীরুহ হয়ে ওঠে। আমাদের সরকারী সার্কুলার সমুহে লেখা থাকে “পার্বত্য তিন জেলা ব্যতীত“, যেন পার্বত্য তিন জেলা বাংলাদেশের মধ্যে নয়! আমরা আলাদা ভাবাতে শিখিয়েছি তাদেরকে তাই তারা আজ জুম্মল্যান্ডের মানচিত্র প্রকাশ করে। শাসক যখন শোষক এর ন্যায় আচরণ করে তখনই আসে স্বাধিকারের দাবি। রাষ্ট্র যেহেতু সংখ্যাগরিষ্ঠদের প্রতিনিধিত্ব করে, সংখ্যাগরিষ্ঠদের পক্ষে কাজ করে (আসলেই কি?) , তাই বিরোধটাও সৃষ্টি হয় সংখ্যাগরিষ্ঠ হিসাবে বাঙালিদের সাথে।
এরপরে আপনার পরিবারের সাথে ঘটা একটা দুঃখজনক ঘটনা কথা বলেছেন। আপনার বাবাকে UPDF সংগঠনটি অপহরণ করেছিল,৮ লাখ টাকা মুক্তিপণের মাধ্যমে ১৬ দিন পর ছাড়িয়ে আনেন। এইজাতীয় সংগঠনগুলো নিয়ে আমার একটাই মতামত, দীর্ঘদিন ধরে চলা যেকোন অধিকার আদায়ের আন্দোলন এ দেখা যায় কিছু সুবিধাভোগী গোষ্ঠীর উদ্ভব ঘটে। আর এই সুবিধাভোগী গোষ্ঠীগুলোই আন্দোলনকে বেহাত করার চেষ্টা করে, কলঙ্কিত করে। সাধারণ জনতা সে যে পক্ষেরই হোক না কেন এর কুফল ভোগ করে। পাহাড়িদের সংগঠনগুলো এখনো নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে যে রেষারেষি, লড়াইয়ে আবদ্ধ তার ফলে কিন্তু ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে আদিবাসীরাই।
লেখাটা বেশি বড় হয়ে গেল,পড়ার মত ধৈর্য থাকবে না হয়ত কারো। তবুও কিছু উদাহরণ দেওয়াটা প্রয়োজন বলে মনে করছি —
*সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ৭টি,
*হত্যাকান্ডের শিকার ৮ জন,
*শারীরিক নির্যাতনের শিকার ১২৬ জন এবং ১২২ জন শিশু ও নারী সহিংসতার শিকার হয়েছে।
এছাড়া গত বছর ভুমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে ৩ হাজার ৯১১ একর। ১০২টি পরিবার উচ্ছেদের শিকার হয়েছে। হুমকিতে আছে আরো ৮০০ পরিবার। আর দেশ ছেড়ে গেছে প্রায় ৮০০ মানুষ।
আর গৃহবধু ধর্ষণ কান্ডের রেশ পেরোতে না পেরোতেই বিশ্বকাপের জয় উদাযাপন করা হল ছাত্রী ধর্ষণের মাধ্যমে ।তার প্রতিবাদে হওয়া মিছিলে হামলা হলো, আর ১৫ তারিখে বসতি উচ্ছেদ করে বিজিবির ব্যাটালিয়ন সদরদপ্তর স্থাপনের প্রতিবাদে হওয়া মিছিলে সেনাবাহিনী তো গুলি করেই বসলো।
অত্যাচারিতের পক্ষে কথা বলাটাই তাই শ্রেয় ভাবি,সে যেই হোক না কেন।
এসব ঘটনার কথা অনলাইনে প্রায়ই আসে। CHTতে বিজিবির চালানো অত্যাচার বলে শেষ করা সম্ভব না। এবার বান্দরবানের খাদ্যসংকটের সময়ও সরকার যেভাবে মুখ ঘুরিয়ে রেখেছে, সেটা যারা দেখেও দেখেন নাই, তাঁদের আর এসব শুনিয়ে লাভ হবে না।
LikeLiked by 1 person
কিন্তু এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ তো আমাদের চালিয়ে যেতেই হবে, অন্যায়কে তো আর চুপ করে মেনে নেওয়া যায় না।
LikeLike
I’ve been surfing on-line greater than three hours nowadays, but I never found any fascinating article like yours.
It’s beautiful price enough for me. Personally, if all webmasters
and bloggers made excellent content as you probably did,
the web will likely be a lot more helpful than ever before.
LikeLike